বৃহস্পতিবার | ২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩১
শিরোনাম :
Waitrose বাজারে আনলো সম্পূর্ণ রিসাইক্লেবল হ্যান্ডওয়াশ বোতল ঢাকায় গুলশান-বনানী লেকে ইউনিসেফের উদ্যোগে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার কর্মসূচি পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে ভোজ্যতেলে চাই মানসম্মত প্যাকেজিং পলিপ্রোপিলিন vs পলিথিন: কোনটি বেশি টেকসই এবং খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ে উপযোগী? গাছের বর্জ্য থেকে ১০০% রিসাইক্লযোগ্য প্লাস্টিক তৈরি করলো সুইডিশ কোম্পানি চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে ঈশ্বরদী ইপিজেডে স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক প্যাকেজিং কারখানা Cambio Roasters বাজারে আনলো রিসাইক্লেবল অ্যালুমিনিয়াম কফি পড বিশ্বের প্রথম কাগজের বোতলে হ্যান্ডওয়াশ: পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনে নতুন মাত্রা এনেছে SUPA Innovations 8th Agro Bangladesh International Expo 2025- এ Total Business Group এর সফল অংশগ্রহণ ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে 8th Agro Bangladesh International Expo 2025
কমছে পরিবেশ দূষণ, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান

কমছে পরিবেশ দূষণ, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান

বর্তমানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে, কিন্তু এর পরিত্যক্ত পণ্য পরিবেশের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে একটি ভিন্ন চিত্র। এখানে পুরোনো প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করে পুনরায় প্রক্রিয়া করা হচ্ছে, যার ফলে একদিকে পরিবেশের দূষণ কমছে, অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার

নীলফামারী জেলায় তিন শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিক কুচি তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় ৪০-৫০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। তারা পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল, স্যালাইন প্যাকেট, সিরিঞ্জ, এবং অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করে সেগুলো মেশিনে ভেঙে কুচি তৈরি করেন। এই কুচিগুলি পরবর্তীতে দেশের বড় বড় প্লাস্টিক কারখানায় সরবরাহ করা হয়, এবং বিদেশেও রপ্তানি করা হয়, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সহায়তা করে।

নারী শ্রমিকদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

এই প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। কেয়া রানী, কবিতা রানী, কুলছুম বেগমসহ অনেক নারী শ্রমিক এখন এই কারখানায় কাজ করে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। কেয়া রানী বলেন, “আগে সংসারের অভাব ছিল, কিন্তু এখন এই কাজের মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।” একইভাবে, কুলছুম বেগমের কথায়, “স্বামী মারা যাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম, কিন্তু এখন এই প্লাস্টিক বর্জ্য কারখানায় কাজ করে সংসার ভালোই চলছে।”

প্রক্রিয়া সুবিধা: পরিবেশ অর্থনীতি রক্ষা

এই প্রক্রিয়ায়, প্লাস্টিক বর্জ্য প্রথমে বাছাই করা হয় এবং তারপর মেশিনে ভেঙে কুচি তৈরি করা হয়। কুচিগুলি ওয়াস মেশিনে পরিষ্কার করা হয় এবং রোদে শুকানো হয়। পরে সেগুলি প্যাকেটজাত করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। কারখানার মালিক কমল রায় বলেন, “আমরা ভাঙারির দোকান ও হকারদের কাছ থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করি, এবং এসব কুচি বিদেশে রপ্তানি করি।”

এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার প্রকল্পে আরও সুবিধা রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য যাতে খাল, নদী বা নালা দখল না করে, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে এটি প্রকৃতপক্ষে একটি টেকসই সমাধান।

কৃষি পরিবেশের উপকারিতা

এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার না করলে ফসলের উপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল আহকাম সরকার বলেন, “প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। তবে, প্লাস্টিক কুচি তৈরি হওয়া পরিবেশ এবং মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত

নীলফামারী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মণ বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাশাপাশি, এসব কারখানায় কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।”

নীলফামারীর এই উদাহরণটি প্রমাণ করে যে, প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা শুধু পরিবেশকে রক্ষা করতে সাহায্য করে না, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে প্লাস্টিক শিল্পে একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করা সম্ভব।

শেয়ার করুন





Translate Site »