সোমবার | ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১০:০৯
শিরোনাম :
আগুন লাগার কারণ ও সতর্কতা

আগুন লাগার কারণ ও সতর্কতা

আগুন লাগার মূল কারণ অসাবধানতা। অসাবধানতার সঙ্গে যোগ হয় অজ্ঞতা। আগুন লাগার বড় ধরনের উৎসগুলো হচ্ছে জ্বলন্ত চুলা, জ্বলন্ত সিগারেট, জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি, খোলা বাতি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গরম ময়লা, আবর্জনা ও অন্যান্য দাহ্য বস্তু, ছেলেমেয়েদের আগুন নিয়ে খেলা বা রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া মেশিনারিজ, আবর্জনায় গ্যাস সৃষ্টি হয়ে, মেশিনের ঘর্ষণ, বজ্রপাত, গ্যাসের সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরণ, সূর্যরশ্মির প্রতিফলন থেকেও আগুন লেগে যেতে পারে।

সতর্কতা

আগুন যাতে না লাগে সে জন্য অবশ্যই অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানে যদি গ্যাসের চু্ল্লি বা সিলিন্ডার থাকে সেই সেগুলো নিয়মিত চেক দিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে রান্নার পর চুলা নিভিয়ে ফেলতে হবে। খোলা বাতির ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
বাজারে যে অগ্নিনির্বপক সিলিন্ডার পাওয়া যায় তার মধ্যে
*শুকনো গুঁড়া
*CO2
*ফেনা
*জল
*ক্লিন এজেন্ট
*আর্দ্র রাসায়নিক
*অগ্নি নির্বাপক বল

আবার এই অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম এনে রেখে দিলেই চলবে না, নিয়মিত এগুলোকে চেক দিতে হবে।

আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে, যেসব কর্মচারি গ্যাসের চুল্লি বা গ্যাস সিলিন্ডারের আসে পাশে কর্মরত থাকে তাদের নিয়মিত কাউনিসিলিং করতে হবে। যাতে তারা সব সময় সতর্ক অবস্থায় থাকে।

বাসার বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো মাসে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করতে পারেন, প্রয়োজন হলে পুরোনো সংযোগ পরিবর্তন করে নিতে হবে। রাসায়নিক ও জ্বালানি পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধান হবেন। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিতে পারেন, না হলে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিল্প-কারখানায় প্রচুর পানি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে। সম্ভব হলে অগ্নিকান্ড মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত একজন লোক রাখতে হবে। বড় শিল্প-কারখানায় প্রতি মাসে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় অগ্নি নির্বাপণ মহড়ার ব্যবস্থাও করতে পারেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই বৈদ্যুতিক সংযোগের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেবেন। ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বর চোখের সামনে দেয়ালে লিখে রাখতে পারেন, যাতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে পারেন। আপনার শরীরে বা পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে দৌড় না দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিন। এতে আগুন নিভে যাবে।

বাসায় বা অফিসে যেখানেই আগুন লাগুক না কেন, ঘাবড়ে যাবেন না। বরং মাথা ঠান্ডা রেখে কী করতে হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন। প্রতিষ্ঠানের সব জায়গা আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে।

আগুন যাতে না লাগে তার জন্য প্রতিষ্ঠানের কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নষ্ট করে ফেলুন। কারণ, এগুলো থেকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চুলার ওপর ভেজা লাকড়ি বা কাপড় শুকাতে দেবেন না এবং ইস্তিরিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ রেখে কখনো যাবেন না। যেকোনো সময় এসব থেকে আগুন লেগে যেতে পারে।

লোক অপসারণ পদ্ধতি
বাড়িতে বা অফিসে যদি আগুন লাগে, ফায়ার সার্ভিসের জন্য বসে না থেকে নিজেরা লোক অপসারণ শুরু করে দিতে পারেন। আর আপনি নিজেও যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন-

– আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো সময় লিফট বন্ধ হয়ে বিপদে পড়তে পারেন।
– ছাদে না উঠে সবাইকে নিচের দিকে নামতে হবে।
– নামার সময় জরুরি নির্গমনের পথ ব্যবহার করতে হবে।
– ওপর থেকে নিচে লাফ দেওয়া যাবে না।
– জরুরি অবস্থায় নিরাপত্তাকর্মীদের টর্চ ব্যবহার করতে হবে।
– আগুন যেহেতু ঊর্ধ্বমুখী, তাই প্রথমে যে তলায় আগুন সে তলা এবং পর্যায়ক্রমে ওপরের ও সর্বশেষে নিচের তলার লোক নামাতে হবে।
– আগুনে আক্রান্ত লোকজন উদ্ধারে অবশ্যই প্রতিবন্ধী, শিশু ও সন্তানসম্ভবা নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এরপর বৃদ্ধ লোক ও মহিলাদের উদ্ধার করতে হবে। তবে প্রতিটি জীবনই মূল্যবান।

আগুনে পুড়ে গেলে করণীয়
– আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ খোলা থাকে। তারপর জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি এনে পোড়া জায়গায় ঢালতে হবে, যতক্ষণ না তার জ্বালা-যন্ত্রণা কমে এবং ক্ষতস্থানের গরমভাবও কমে না যায়।
– আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়ার আগে ঘড়ি বেল্ট, আংটি (যদি থাকে), কাপড় খুলে ফেলবেন।
– পুড়ে যাওয়া অংশে যদি কাপড় লেগে থাকে তবে সেটা না টেনে বাকি কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলুন।
– পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে।
– যদি মুখে কোথাও পুড়ে যায় তবে পানি দিয়ে ঠান্ডা করতে হবে যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় ও ব্যথা কমে।
– মুখ ঢাকার কোনো প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে হবে, যাতে নাক, মুখ ও চোখ খোলা রেখে মুখ ঢাকা যায়।
– পোড়া জায়গা দিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে যায়, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ তার রক্তচাপ কমে যায়, হূৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

আগুন যদি লেগেই যায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত আগুন নেভানোর জন্য নিজেরা চেষ্টা করুন।

শেয়ার করুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




আইটি সহায়তাঃ সাব্বির আইটি