বৃহস্পতিবার | ২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১১:১৮
শিরোনাম :
Waitrose বাজারে আনলো সম্পূর্ণ রিসাইক্লেবল হ্যান্ডওয়াশ বোতল ঢাকায় গুলশান-বনানী লেকে ইউনিসেফের উদ্যোগে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার কর্মসূচি পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে ভোজ্যতেলে চাই মানসম্মত প্যাকেজিং পলিপ্রোপিলিন vs পলিথিন: কোনটি বেশি টেকসই এবং খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ে উপযোগী? গাছের বর্জ্য থেকে ১০০% রিসাইক্লযোগ্য প্লাস্টিক তৈরি করলো সুইডিশ কোম্পানি চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে ঈশ্বরদী ইপিজেডে স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক প্যাকেজিং কারখানা Cambio Roasters বাজারে আনলো রিসাইক্লেবল অ্যালুমিনিয়াম কফি পড বিশ্বের প্রথম কাগজের বোতলে হ্যান্ডওয়াশ: পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনে নতুন মাত্রা এনেছে SUPA Innovations 8th Agro Bangladesh International Expo 2025- এ Total Business Group এর সফল অংশগ্রহণ ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে 8th Agro Bangladesh International Expo 2025
ঢাকায় রাস্তা নির্মাণ করা হলো প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে!

ঢাকায় রাস্তা নির্মাণ করা হলো প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে!

প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি করা এখন আর কোনো অবাস্তব ধারণা নয়; ঢাকার রায়েরবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে একটি রাস্তা এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সহায়তা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরলিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী গবেষক ড. শাহাদাত হোসেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগটি সফল হলে দেশের সড়ক সংস্কারের খরচ অনেকটাই কমে যাবে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের ২২৫ মিটার সম্প্রসারিত অংশে পাথরের পরিবর্তে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক গবেষণাগার এই সড়ক নির্মাণ করেছে। উন্নত দেশে বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে সড়ক নির্মাণের ধারণা পুরোনো হলেও, এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্লাস্টিক ব্যবহার করে নির্মিত সড়ক।

প্রতিদিনের জীবনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে পলিব্যাগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা মোরগ তৈরি ও বিপণনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। দেশে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই পলিথিন। মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ৪০% রিসাইকেল হয়, বাকিটা পরিবেশে দূষণ ঘটায়। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী মোট দূষণের ২.৪৭ শতাংশের জন্য দায়ী, যা প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ঘটে। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পদে পরিণত করার প্রমাণ এই রাস্তা।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেনের গবেষণা অনুযায়ী এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করে নির্মিত সড়কের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সড়কটি নির্মাণ করা হয়, তবে পরীক্ষামূলক হওয়ায় এটি সম্পর্কে তখন খবর প্রকাশ করা হয়নি।

গত সেপ্টেম্বরে ঢাকার রায়েরবাজারে প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি এই রাস্তা চালু হয়েছে। এই প্রকল্পে সড়ক পরিবহন বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস আরলিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সহায়তা করেছে। ড. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে টেক্সাসেও এমন রাস্তা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে গিয়ে তিনি বিটুমিনের পরিবর্তে প্লাস্টিক ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দুই বছর ল্যাব গবেষণার পর চমকপ্রদ ফলাফল পান।”

রাস্তা নির্মাণের সাথে যুক্ত অন্যান্য প্রকৌশলী বলেন, “প্রতিবছর রাস্তা তৈরিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। প্রধান সড়ক বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি রাস্তা সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে।” টেক্সাসে এই রাস্তাটি সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। সফল হলে, প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

সড়ক গবেষণাগারের তথ্যানুযায়ী, অন্যান্য দেশে সড়কের উপরের স্তরে (সারফেস কোর্স) পিচের সঙ্গে প্লাস্টিক মেশানো হয়। সড়ক নির্মাণে যত উপাদান ব্যবহৃত হয়, এর মাত্র পাঁচ শতাংশ বিটুমিন, যার মধ্যে আট শতাংশ প্লাস্টিক মেশানো হয়। এটি পরিবেশ রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে শুধু পিচ ঢালাইয়ে নয়, নিচের স্তরেও (বেইজ কোর্স-১) পাথরের সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, সড়ক নির্মাণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, যার গলনাঙ্ক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলে যায় এবং ভারী বৃষ্টিতে পিচের ঢালাই ভেঙে যায়। টেকসই পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৭০ ডিগ্রির বেশি, যা বর্ষাতেও টেকে। এক টন ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনের দাম ৮৪ হাজার টাকা, আর সমপরিমাণ পিএমবির দাম এক লাখ ১৬ হাজার টাকা। প্লাস্টিক মিশ্রিত সড়কটিও ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনে নির্মিত, এবং এতে মোট আট শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য মেশানো হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানায়, বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত পণ্যবহনের ফলে সড়ক নষ্ট হয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতায় সড়কে রাটিং (উঁচু-নীচু হয়ে যাওয়া) এবং ডিসট্রেস (ফেটে যাওয়া) বাড়ছে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ঢালাইয়ে রাটিং হয় না। প্লাস্টিকের ব্যবহারে বিটুমিন এবং পাথর আমদানি কমবে।

২০০৫ সাল থেকে ১৫ বছরে দেশে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার তিন কেজি থেকে নয় কেজিতে বেড়েছে। ঢাকায় দৈনিক ১০ হাজার কেজি কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যার মাত্র ৪০-৬০ শতাংশ ভাগাড়ে যায়, বাকিটা সড়কে থাকে। সেখান থেকে নদী ও জলাশয়ে পৌঁছে। এক কিলোমিটার প্লাস্টিক সড়ক বছরে ১৬০ টন কার্বন নিঃসরণ কমাবে, যা ১০৬টি গাড়ির এক বছরের কার্বন নিগর্মনের সমান।

শেয়ার করুন





Translate Site »