বৃহস্পতিবার | ২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | রাত ৮:৫৮
শিরোনাম :
Waitrose বাজারে আনলো সম্পূর্ণ রিসাইক্লেবল হ্যান্ডওয়াশ বোতল ঢাকায় গুলশান-বনানী লেকে ইউনিসেফের উদ্যোগে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার কর্মসূচি পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে ভোজ্যতেলে চাই মানসম্মত প্যাকেজিং পলিপ্রোপিলিন vs পলিথিন: কোনটি বেশি টেকসই এবং খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ে উপযোগী? গাছের বর্জ্য থেকে ১০০% রিসাইক্লযোগ্য প্লাস্টিক তৈরি করলো সুইডিশ কোম্পানি চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে ঈশ্বরদী ইপিজেডে স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক প্যাকেজিং কারখানা Cambio Roasters বাজারে আনলো রিসাইক্লেবল অ্যালুমিনিয়াম কফি পড বিশ্বের প্রথম কাগজের বোতলে হ্যান্ডওয়াশ: পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনে নতুন মাত্রা এনেছে SUPA Innovations 8th Agro Bangladesh International Expo 2025- এ Total Business Group এর সফল অংশগ্রহণ ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে 8th Agro Bangladesh International Expo 2025
প্লাস্টিক তৈরির গোপন রহস্য – কীভাবে জন্ম নেয় আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী?

প্লাস্টিক তৈরির গোপন রহস্য – কীভাবে জন্ম নেয় আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী?

প্লাস্টিক—এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা যেকোনো জায়গায় এটি ব্যবহার করি, তবে আপনি কি জানেন যে প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করে? প্লাস্টিকের তৈরি হওয়া একেবারে প্রথম থেকেই শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত কোন কাঁচামাল থেকে এটি তৈরি হয়, কীভাবে বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিকের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয় এবং এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

. প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল

প্লাস্টিক মূলত দুটি প্রধান কাঁচামাল থেকে তৈরি হয়—পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। এই উপাদানগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙতে হয় এবং ছোট রাসায়নিক যৌগ তৈরি করতে হয়। তারপর এই যৌগগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করা হয়।

ক্র্যাকিং (Cracking):

ক্র্যাকিং হল প্রাথমিক প্রক্রিয়া যেখানে পেট্রোলিয়াম বা গ্যাস থেকে ছোট, সহজ রাসায়নিক যৌগ বের করা হয়, যেমন ইথিলিন (Ethylene) এবং প্রোপিলিন (Propylene), যা পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

. পলিমারাইজেশন: প্লাস্টিকের মেরুদণ্ড

প্লাস্টিক তৈরির প্রধান প্রক্রিয়া হলো পলিমারাইজেশন। এটি একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যেখানে ছোট মলিকিউল বা মোনোমার একত্রিত হয়ে একটি দীর্ঘ চেইন তৈরি করে, যা পলিমার নামে পরিচিত। এই পলিমার প্রক্রিয়াতে প্লাস্টিকের বিশেষ গুণাবলী তৈরি হয়—যেমন নমনীয়তা, শক্তি এবং স্থায়িত্ব। উদাহরণস্বরূপ, পলিথিন (Polyethylene) তৈরি হয় ইথিলিনের পলিমারাইজেশন থেকে।

. প্লাস্টিক তৈরির প্রধান প্রক্রিয়াগুলো

প্লাস্টিকের পণ্য তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মধ্যে কিছু অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত প্রক্রিয়া হলো:

ইনজেকশন মোল্ডিং (Injection Molding):

এটি প্লাস্টিক তৈরির অন্যতম সাধারণ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় গলিত প্লাস্টিক একটি মোল্ডে প্রবাহিত করা হয়, যেখানে এটি ঠান্ডা হয়ে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত আকারে পরিণত হয়। প্রায় সব ধরনের ছোট এবং বড় প্লাস্টিকের পণ্য এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়—যেমন প্লাস্টিকের বোতল, খেলনা, গ্যাজেটের অংশ ইত্যাদি।

এক্সট্রুশন (Extrusion):

এক্সট্রুশন প্রক্রিয়ায় গলিত প্লাস্টিককে একটি মোল্ডের মাধ্যমে চাপ দিয়ে বের করা হয়। এই পদ্ধতি দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টিকের শীট, টিউব, রড, ফিল্ম এবং অন্যান্য উপাদান। প্লাস্টিকের ফিল্ম বা কাপড় সাধারণত এক্সট্রুশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।

থার্মোফর্মিং (Thermoforming):

এই প্রক্রিয়ায়, প্লাস্টিকের শীটকে গরম করে একটি নির্দিষ্ট আকারে ঢালাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মূলত প্লাস্টিকের প্যাকেজিং বা কনটেইনার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

রোটেশন মোল্ডিং (Rotational Molding):

এই পদ্ধতিতে, গলিত প্লাস্টিক একটি ঘূর্ণমান মোল্ডে ঢেলে ঘুরিয়ে শীতল করা হয়। এটি সাধারণত বড় আকারের পণ্য তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়—যেমন পুলস, কুলার, গাড়ির ট্যাঙ্ক ইত্যাদি।

. থার্মোপ্লাস্টিক থার্মোসেট প্লাস্টিকের পার্থক্য

প্লাস্টিকের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: থার্মোপ্লাস্টিক এবং থার্মোসেট প্লাস্টিক

  • থার্মোপ্লাস্টিক: এই ধরনের প্লাস্টিক তাপ দিলে গলে যায় এবং পুনরায় আকার দেওয়া যায়। এটি পুনঃব্যবহারযোগ্য। উদাহরণ: পলিথিন, পলিপ্রোপিলিন
  • থার্মোসেট প্লাস্টিক: একবার গরম হয়ে শক্ত হয়ে গেলে, এটি আর গলে না বা আকার পরিবর্তন করা যায় না। এগুলি শক্ত এবং টেকসই। উদাহরণ: বাকেলাইট, ইপোক্সি রেজিন

. বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক: একটি পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অনেক কোম্পানি এখন বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরি করছে, যা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি হয় এবং সহজেই পরিবেশে মিশে যায়। উদাহরণস্বরূপ, পলিল্যাকটিক অ্যাসিড (PLA) একটি উদাহরণ, যা ভুট্টার স্টার্চ বা আখের রস থেকে তৈরি হয়।

. প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং: এক নতুন জীবন

প্লাস্টিকের পরবর্তী জীবন শুরু হয় রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পুরনো বা ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পণ্যগুলো পুনরায় গলানো হয় এবং নতুন পণ্য তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্লাস্টিকের বর্জ্য কমাতে সহায়ক, এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

. প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং চ্যালেঞ্জ

যদিও প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং বেশ কার্যকর, তবুও এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু প্লাস্টিক যেমন পলিস্টিরিন এবং পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC) রিসাইক্লিংয়ের জন্য বেশ কঠিন এবং সেগুলি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং, প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং ও ব্যবহারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

প্লাস্টিক তৈরির প্রক্রিয়া একটি অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক এবং সূক্ষ্ম কাজ, যা একটি সাধারণ কাঁচামাল থেকে শুরু করে শক্ত, নমনীয় এবং বহুমুখী উপাদানে রূপান্তরিত হয়। প্লাস্টিকের উদ্ভাবন আমাদের জীবনে বিপ্লব এনেছে, তবে এর পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলা করতে আমাদের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উপাদান হলেও, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এই উপাদানটির উন্নত এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

শেয়ার করুন





Translate Site »