বুধবার | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১:৩৪
শিরোনাম :
৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিংয়ের বাজার প্রতিবছরের ন্যয় এবারও শুরু হচ্ছে প্লাস্টিক, প্রিন্টিং, প্যাকেজিং (IPF) মেলা। সাফিউস সামি আলমগীর জিতেছেন এফবিসিসিআই বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্লাস্টিক ধ্বংসের উপাদান প্রকৃতিতে পাওয়া গেল দূষণরোধে বান্দরবানে এবার প্লাস্টিক বোতলের নৌকা! বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে – বেঙ্গল ডিরেক্টর পরিবেশের সুরক্ষায় প্লাস্টিকপণ্য পুনঃব্যবহার বা রিসাইক্লিংয়ে জোর দিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল মান নিয়ন্ত্রনে টেস্টিং মেশিন প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়নে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে: মুখ্য সচিব পরিবেশবান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন
প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়নে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে: মুখ্য সচিব

প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়নে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে: মুখ্য সচিব

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের প্লাস্টিক খাতের সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
শনিবার (৯ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে টেকসই রপ্তানি বৃদ্ধি; প্লাস্টিক খাতের কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত দেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমানেরর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ-পরবর্তী সময়ে দেশের প্লাস্টিক খাতের বিকাশে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কাঠামো সহজীকরণ, সংশ্লিষ্ট নীতিমালার যুগোপযোগীকরণ, পণ্য জাহাজীকরণে শুল্ক হ্রাস, রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, নতুন পণ্য উদ্ভাবনে ডিজাইনিং কার্যক্রমের ওপর জোরারোপ, বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপের আহ্বান জানায় ঢাকা চেম্বার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, জাতিগতভাবে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। একই সঙ্গে আমাদের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমান সরকার দেশের বেসরকারিখাতের অগ্রগতির জন্য ক্রমাগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, যা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, বেসরকারিখাতের সহায়তায় আমরা সব নেতিবাচক সমালোচনা মোকাবিলা করতে পেরেছি এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এলডিসি উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের প্লাস্টিক খাতের সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এ খাতের উন্নয়নে শুল্কমুক্ত সুবিধা সম্প্রসারণ, অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান, রপ্তানি পণ্যের জাহাজীকরণের মাশুল হ্রাস এবং সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে পণ্যের বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই, যেখানে প্লাস্টিক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ প্লাস্টিক খাতের বাৎসরিক রপ্তানি প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এ খাতের বিকাশে নীতিসহায়তা প্রদান, দেশে বিশ্বমানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, উৎপাদিত পণ্যের পেটেন্ট স্বত্ব, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ, এসএমইদের সক্ষমতা বাড়ানো বিশেষ করে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাস করতে হবে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের ওপর নজর দিতে হবে। কারণ এ থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সব রপ্তানিকারকের জন্য একই হারে করপোরেট কর নির্ধারণ ও বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করতে হবে। এছাড়াও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার আগে আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্লাস্টিক খাতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এবং এ খাতের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি জানান, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে প্লাস্টিক খাত এবং এটি প্রতি বছর প্রায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থায়ন জটিলতা, কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল দক্ষ মানবসম্পদ ও পণ্যের বহুমুখীকরণ এ খাতের অন্যতম প্রতিন্ধকতা।
তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তোরণ-পরবর্তী সময়ে আমাদের প্লাস্টিক শিল্প পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা এবং প্রণোদনা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সক্ষমতা হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এটি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। এলডিসি-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশের উন্নয়ন, পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন, আইপিআর ইকোসিস্টেম, নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান বিপিজিএমইএ সভাপতি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (অডিট কাস্টমস) ড. মো. শহীদুল ইসলাম, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে মেটানো হয়। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদনে বেশি হারে জোরারোপ, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণ, নিজস্ব ডিজাইন হাউজ স্থাপনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন এনবিআরের এই কর্মকর্তা।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারে আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে এবং বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তোরণের বিষয়ে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; তবে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। সেই সঙ্গে পণ্য উৎপাদন ব্যয় হ্রাস এবং বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে স্বল্পমূল্যে জাহাজীকরণ সম্ভব হলে প্লাস্টিক শিল্পে রপ্তানি আরও বাড়বে।
এ সময় রপ্তানির সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেন আহসান খান চৌধুরী। এছাড়া প্লাস্টিক শিল্পের জন্য তিনি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক খাতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেন।
ড. ইজাজ হোসেন প্লাস্টিক খাতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা এবং সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি প্লাস্টিক পণ্যের পুনর্ব্যবহারের ওপর জোরারোপ করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, আমাদের জিডিপিতে প্লাস্টিক খাতের অবদান ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং এ খাতের মাধ্যমে দেশে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে দেশের প্লাস্টিক খাতের অবদান ০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আমাদের উৎপাদিত পণ্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পোল্যান্ড, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হয়।
এ শিল্পের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন, আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি সুবিধা নিশ্চিতকরণ, নতুন পণ্য উদ্ভাবনে ডিজাইনিং কার্যক্রমের ওপর জোরারোপ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, ইডিএফ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

শেয়ার করুন





Translate Site »